জাতীয় প্রতীক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতীক। এ প্রতীক হলো পানিতে ভাসমান জাতীয় ফুল শাপলা এবং এর উভয় পার্শ্বে একটি করে ধানের শীষ, চূড়ায় পাটগাছের পরস্পরযুক্ত তিনটি পাতা এবং পাতার উভয় পার্শ্বে দুটি করে তারকা। পানি, ধান ও পাট প্রতীকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হয়েছে বাংলাদেশের নিসর্গ ও অর্থনীতি। এ তিনটি উপাদানের উপর স্থাপিত জলজ প্রস্ফুটিত শাপলা হলো অঙ্গীকার, সৌন্দর্য ও সুরুচির প্রতীক। তারকাগুলোতে ব্যক্ত হয়েছে জাতির লক্ষ্য ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা। [সিরাজুল ইসলাম][বাংলাপিডিয়া]
প্রতিবেদন
https://www.kalerkantho.com/print-edition/tuntuntintin/2021/12/13/1100786
কালের কণ্ঠ, ১৩ ডিসেম্বর ২০২১
[ যে ভা বে এ লো ]
আমাদের জাতীয় প্রতীক
১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ২৩ তারিখ। শহীদ মিনারের সামনে তৎকালীন সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের ১০টি স্কেচ কে বা কারা ঝুলিয়ে রেখেছিল। সব ছবিতেই দানবরূপী ইয়াহিয়ার মুখাবয়ব আঁকা। ছবিগুলোর নিচে লেখা ‘এই জানোয়ারটা আবার আক্রমণ করতে পারে।
লেখাটি পড়ার পর আর সন্দেহ থাকে না ছবিগুলো কে এঁকেছেন! পটুয়া কামরুল হাসান ছিলেন সে সময় বিদ্রোহী শিল্পীদের একজন; তাঁরই কাজ ছিল এটা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে আঁকা পোস্টারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল শিল্পী কামরুল হাসানের ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’ শব্দগুচ্ছের পোস্টারটি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে তাঁকে দেশের জাতীয় প্রতীক ও বিভিন্ন মনোগ্রাম তৈরির দায়িত্ব দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তী সময়ে কামরুল হাসানের সঙ্গে যোগ দেন নকশাবিদ ও ভাষা আন্দোলন কর্মী মোহাম্মদ ইদ্রিসসহ আরো বেশ কয়েকজন।
জাতীয় প্রতীকের জন্য মোহাম্মদ ইদ্রিস আঁকেন ভাসমান একটি শাপলা, শিল্পী শামসুল আলম শাপলার দুই পাশে ধানের শীষবেষ্টিত পাটপাতা ও চারটি তারকা সেঁটে দিয়ে প্রতীকটির পরিপূর্ণতা নিয়ে আসেন। কামরুল হাসান ও তাঁর দলের করা এই প্রতীকটি জাতীয় প্রতীক হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয় ১৯৭২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা বাংলাদেশের সংবিধানের চারটি মূলনীতি। জাতীয় প্রতীকের চারটি তারকা চিহ্ন দিয়ে এই চারটি মূলনীতিকেই বোঝানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের সিলমোহর বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ এবং বাংলাদেশ সরকার তার দাফতরিক কাজে ব্যবহার করে থাকে।
এ সিলমোহরের একটি সংস্করণ বাংলাদেশী পাসপোর্টগুলির প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় ব্যবহৃত হয়।[২] বাংলাদেশের প্রথম পতাকার নকশার মত করে এই সিলটি তৈরী করা হয় যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকলীন সময়ে ব্যবহৃত জাতীয় পতাকার বৃত্তাকার সংস্করণ। নকশার বাইরের সাদা অংশটির উপরে বাংলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এবং নিচে সরকার লেখা এবং দুইপাশে দুইটি করে মোট চারটি লাল ৫ কোণা বিশিষ্ট তারকা। কেন্দ্রে একটি লাল বৃত্তের মধ্যে হলুদ রংয়ের বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা। এটির নকশাকার হলেন ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা নিত্যানন্দ সাহা। সিলটি প্রথম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী সরকার গ্রহণ করে যা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত ।
১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের নির্বাসিত সরকার ছিল এই মুজিবনগর সরকার। ১৯৭১ সালের এপ্রিলের গোড়ার দিকে গঠিত এই অস্থায়ী সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এটি একই বছর মার্চ মাসের ২৬ তারিখ বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার ঘোষণাকে নিশ্চিত করে।http://www.bangladesh.gov.bd/index.php?option=com_weblinks&task=ministry&Itemid=152