বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা

এ কথা আমাদের কারোরই অজানা নয় যে লাল সবুজে ঘেরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বাঙ্গালির জীবন ও ইতিহাসে কতখানি গুরুত্ব বহন করে। তবে বর্তমান যে পতাকাটি আমরা সর্বত্র দেখি তা আগে এরকম ছিলো না। বর্তমান পতাকাটির রূপকার কামরুল হাসান হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ও তার কিছু আগে যে পতাকাটি ব্যবহার করা হয়েছিলো তার নকশাকার ভিন্ন।

বাংলাদেশ- অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এক নাম। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার নকশা করা হয়ে গিয়েছিলো স্বাধীনতার কিছু আগেই। বাংলাদেশের প্রথম পতাকাটির নকশা কিন্তু ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’ সংগঠনের কিছু কর্মী এবং ছাত্রনেতার হাত ধরে। ১৯৭০ সালের ৬ ই জুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১০৮ নং কক্ষে পতাকার প্রাথমিক নকশাটি করা হয় যার নকশাকাররা হচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আব্দুর রব, কাজী আরেফ আহমেদ, শাহজাহান সিরাজ, মনিরুল ইসলাম (মার্শাল মনি), স্বপন কুমার চৌধুরী; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাস, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু, ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদ, কামরুল আলম খান (খসরু) সহ আরো অনেকে। এরপরে, ইউসুফ সালাউদ্দিন আহমেদ এবং  হাসানুল হক ইনু পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমান বুয়েট) কায়েদে আজম হলের (বর্তমান তিতুমীর হল) ৩১২ নং কক্ষের এনামুল হকের কাছ থেকে মানচিত্রের বই নেন এবং তাঁরা ট্রেসিং পেপারে পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র আঁকেন। ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাস অতঃপর হলুদ রং এবং ম্যাচের কাঠি ব্যবহার করে মানচিত্রটি পতাকার লাল বৃত্তের মাঝে আঁকেন। এভাবেই প্রস্তুত হয় বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকা যা কিনা ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রথম উত্তোলিত হয়। এ বিষয়ে ইউসুফ সালাউদ্দিন আহমদ দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার ডিসেম্বরের ৯ তারিখ ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে একটি প্রতিবেদনে বলেন :

চূড়ান্ত মহড়া ৬ই জুন বিকালে শেষ হয়। ওই দিনই সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত হয় জয় বাংলা বাহিনীর একটা পতাকা তৈরির বিষয়ে যা পরদিন (৭ই জুন) সকালের অনুষ্ঠানকে আরও তাৎপর্যমণ্ডিত করবে। সে অনুযায়ী বাদন দলের বাড়তি সৌন্দর্যের জন্য সংগৃহীত কাপড় থেকে একটা পতাকা তৈরি হয়। কালচে সবুজ জমিনের ঠিক মাঝখানে পরিমিত আকারে একটা লাল বৃত্ত। (পতাকাটি বলাকা ভবনের ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় অফিসের পাশে এক দরজির দোকান ‘পাক ফ্যাশন’ থেকে সেলাই করে নেয়া হয়)। পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত ও পতাকা তৈরি পর্যন্ত কাজী আরিফ (আরেফ) ছাড়া উচ্চ পর্যায়ের কারো অনুমতি গৃহীত হয়নি। কিন্তু পরদিন একটা পতাকা, তা যে নামেই হোক, প্রদর্শনের আগে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন দেখা দেয়। ছাত্রলীগের ৭ই জুন পালনের সকল কার্যক্রম তখন জহুরুল হক হলের নিচ তলার ১১৬ নম্বর কক্ষ থেকে পরিচালিত হচ্ছিল। ওই হলেই তিন তলার একটি কক্ষে সিরাজুল আলম খান প্রায়ই থাকতেন। স্বভাবতই, স্বাধীনতার কার্যক্রমের একজন উর্ধতন নেতা হিসেবে তার কাছে অনুমোদন নিতে যাওয়া হল। তিনি পতাকা তৈরি ছাড়া সকল কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত থাকায় আগামীকালের কার্যক্রমকে আরও অর্থবহ করার জন্য পতাকা তৈরির কথা জানিয়ে তা প্রদর্শনের জন্য তাঁর অনুমতির জন্য আবেদন করা হল। সমস্ত কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন ‘যে নাম দিয়েই পতাকা প্রদর্শন কর না কেন তাকে জনগণের ভবিষ্যতের স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা বলে ভেবে নিতে কোন বাঁধা থাকবে না।’ এই মুহূর্তে ‘বাঙলাদেশ’ ও বাঙ্গালি’ নিয়ে প্রতিপক্ষের অপপ্রচারের শিকার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করলেন। তিনি বললেনঃ ‘বাংলাদেশ তথা পূর্ব বাঙলার স্বাধীনতা বিষয়ক আন্দোলনকে অনেকেই যুক্ত বাঙলার কথা বলে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশেরই বিরুদ্ধে ঠেলে দিতে পারে।’ অনেক আলোচনার পর তিনি লালবৃত্তের মাঝে পূর্ব বাঙলার মানচিত্রে এঁকে প্রদর্শনের পক্ষে মত দিলেন। সোনার বাঙলার প্রতিচিত্র সুস্পষ্ট করতে তিনি ওই মানচিত্র সোনালি রঙয়ে আঁকার পক্ষে মত দিলেন। এই সব কিছুর মধ্য দিয় ৬ই জুনের রাতের দ্বিতীয় প্রহরের প্রায় শেষ প্রান্ত উপস্থিত। বলাকা ভবনে ছাত্রলীগ অফিস হওয়ার কারণে নিউ মার্কেটের পাশের কাঁচা বাজার সংলগ্ন এক রঙয়ের দোকান থেকে, দোকানিকে জাগিয়ে, সোনালি রঙ ও তুলি জোগাড় করা হল। মানচিত্রের নকশা অঙ্কন এবং রঙ করার জন্য একজন শিল্পীর প্রয়োজন দেখা দিল। সে সমস্যাও সহজেই সমাধান হয়ে গেল। সলিমুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন উপলক্ষে ব্যানার ফেস্টুন আঁকার জন্য কুমিল্লা ছাত্রলীগের নেতা শিবনারায়ণ দাস তখন কর্মরত ছিল। সে একজন ভাল শিল্পীও বটে। ফলে তাকে নিয়ে আসা হল কালচে সবুজ জমিনের মধ্যখানে লাল বৃত্তের মাঝে সোনালি রঙ দিয়ে পূর্ব বাঙলার মানচিত্র আঁকার জন্য। ১১৬ নম্বর কক্ষের মেঝেতে বিছিয়ে লাল বৃত্তের মাঝে পূর্ব বাঙলার সোনালি মানচিত্র আঁকা হলো।

পতাকা প্রথম উত্তোলন করেন ছাত্রনেতা ও ‘ডাকসু’র তদানীন্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আ স ম আবদুর রব। এ সময় অন্যান্য ছাত্রনেতা ও কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। অতঃপর মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে ২৩ শে মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এর বাসভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পতাকার লাল বৃত্তটি ছিলো উদীয়মান লাল সূর্যের প্রতীক। ‘সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যক্টবুক’ অনুযায়ী, বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি বুঝাতে পতাকায় সবুজ রং ব্যবহার করা হয়েছিল। তৎকালীন পতাকাটি তাই ছিলো উজ্বল সবুজে বিরাজমান লাল বৃত্তের মাঝে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব বাংলা) এর মানচিত্র।

 

 

১২ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে বাংলাদেশের পতাকা থেকে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলা হয়।

কারণঃ

১) পতাকার দুটি পাশ রয়েছে, ফলে একদিক থেকে মানচিত্র সঠিকভাবে দেখা গেলেও অপরদিক থেকে ভুলভাবে প্রদর্শিত হয় যা কাম্য নয়।

২) পতাকার ভেতরে মানচিত্র থাকার কারণে চিত্রশিল্পী ব্যতীত মানচিত্র সংবলিত পতাকা আঁকা সকলের কাছেই অত্যন্ত দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে।

৩) স্বল্প সময়ে এবং কম্পাস, স্কেল ইত্যাদি উপকরণ ছাড়া সঠিকভাবে মানচিত্র আঁকা সম্ভব হবে না ফলে মানচিত্রের সঠিক রূপ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে।

পতাকার মাঝে মানচিত্র আঁকার কারণ ব্যাখ্যা করে শিব নারায়ণ দাশ বলেন,

“পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিম বাংলা আলাদা করে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বোঝাতে মানচিত্রটি দেয়া হয় এবং স্বাধীনতার পরে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে সেটি সরিয়ে বর্তমান রূপ দেওয়া হয়”।

মানচিত্র সরানোর কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন,

“পতাকা সঠিকভাবে তুলে ধরা জাতির কর্তব্য। কিন্তু মানচিত্র থাকায় পতাকাটি আঁকা অনেক কঠিন এবং বিকৃত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই সহজ করে পতাকা আঁকার জন্য মানচিত্রটি সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল”।

বাংলাদেশের পতাকার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে- পতাকার লাল বৃত্তটি সবুজ আয়তক্ষেত্রের একদম মাঝখানে রাখার বদলে একপাশে একটু চাপানো হয়েছে।


কারণঃ

মাঝখানে না রেখে একপাশে একটু চাপানোর কারণে পতাকা তরঙ্গাকারে ওড়ার সময় বৃত্তটিকে মাঝখানে আছে বলে মনে হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পতাকার সঙ্গে জাপান ও পালাউ নামক ২টি রাষ্ট্রের পতাকার মিল রয়েছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পটুয়া কামরুল হাসানকে পতাকাটির নতুন নকশা, ব্যাখ্যা ও এর উপর প্রতিবেদন করার নির্দেশ দেন। কামরুল হাসান কর্তৃক নকশা করা মানচিত্রবিহীন পতাকাটিই বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে সর্বত্র প্রচলিত। কামরুল হাসানের কিন্তু বর্তমান পতাকাটি মাপজোখ ও তৈরি করতে বেশ সময় লেগেছিলো। পতাকার জন্য ১৯৭২ সালে প্রণীত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা। এই বিধিমালা অনুযায়ী বর্তমান জাতীয় পতাকার মাপ এবং প্রকৃতি নিম্নরূপঃ

জাতীয় পতাকার মাপ

১) পতাকাটি হবে গাঢ় সবুজ রঙের এবং দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০:৬ এমন একটি সবুজ রঙের আয়তক্ষেত্রের মধ্যভাগের কাছাকাছি থাকবে একটি লাল বৃত্ত।

২) লাল বৃত্তটির ব্যাসার্ধ হবে পতাকার দৈর্ঘ্যের এক-পঞ্চমাংশ। পতাকার দৈর্ঘ্যের নয়-বিংশতিতম অংশ হতে অঙ্কিত লম্বরেখা এবং পতাকার প্রস্থের মধ্যবিন্দু হতে অঙ্কিত আনুভূমিক রেখার ছেদবিন্দুই হবে লাল বৃত্তটির কেন্দ্রবিন্দু।

(অর্থাৎ, পতাকার দৈর্ঘ্য ১০ ফুট হলে প্রস্থ হবে ৬ ফুট, লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে ২ ফুট, পতাকার দৈর্ঘ্যের সাড়ে ৪ ফুট ওপরে প্রস্থের মাঝ বরাবর অঙ্কিত আনুপাতিক রেখার ছেদ বিন্দু হবে লাল বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু)।

৩) পতাকার সবুজ পটভূমিতে থাকবে প্রতি হাজারে প্রোসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট গ্রীন এইচ-২ আর এস ৫০ পার্টস রং এবং লাল বৃত্তটি হবে প্রতি হাজারে প্রোসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট অরেঞ্জ এইচ-২ আর এস ৬০ পার্টস রঙের।

বর্তমানে ব্যবহৃত বাংলাদেশের পতাকা

পতাকা ব্যবহারের জন্য সরকারী নির্দেশনানুযায়ী বিভিন্ন মাপ রয়েছে যেমন- ভবনে ব্যবহার্থে ১০ বাই ৬ ফুট (৩.০ বাই ১.৮ মিটার) কিংবা ৫ বাই ৩ ফুট (১.৫২ বাই ০.৯১ মিটার) কিংবা ২.৫ বাই ১.৫ ফুট (৭৬০ বাই ৪৬০ মিলিমিটার)। মোটরগাড়িতে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপের মধ্যে বড় গাড়ীর জন্য- ১৫ বাই ৯ ইঞ্চি (৩৮০ বাই ২৩০ মিলিমিটার) এবং ছোট ও মাঝারী গাড়ীর জন্য ১০ বাই ৬ ইঞ্চি (২৫০ বাই ১৫০ মিলিমিটার)। আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক অনুষ্ঠানে যে সব টেবিল পতাকা ব্যবহৃত হয় সেগুলোর জন্য ১০ বাই ৬ ইঞ্চি (২৫০ বাই ১৫০ মিলিমিটার) মাপটি নির্ধারিত।

বাংলাদেশের সিভিল পতাকা

বাংলাদেশের নৌ পতাকা

স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় পতাকা ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী এবং সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত অন্য যে কোন দিবসে সকল সরকারী ও বেসরকারী ভবনসমূহে এবং বিদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনের অফিস ও কনস্যুলার পোস্টসমূহে উত্তোলন করতে হয়। ২১ শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বা শহীদ দিবস, ১৫ ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত অন্য যে কোন দিবসে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নিয়ম রয়েছে।

পটুয়া কামরুল হাসান এর ডিজাইনকৃত বর্তমান জাতীয় পতাকায় গাঢ় সবুজ রঙটি বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি এবং তারুণ্যের প্রতীক। আর মাঝের লাল বৃত্তটি উদীয়মান সূর্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের দেয়া রক্ত ও আত্মত্যাগ কে নির্দেশ করে। বর্তমান পতাকায় বাংলাদেশের মানচিত্র বাদ যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে- পতাকার দুইদিকে মানচিত্রের সঠিক উপায়ে সেলাই নিয়ে জটিলতা। সকলবিধিপূর্বক বানানো কামরুল হাসানের নকশা করা বাংলাদেশের পতাকাটি ১৯৭২ সালের ১৭ ই জানুয়ারী দাপ্তরিকভাবে ও সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হিসেবে গৃহীত হয়।

স্বাধীন বাংলাদেশের গৌরবজ্বল উপাখ্যানের অন্যতম ধারক ও বাহক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। লাল-সবুজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে আছে বাংলাদেশীদের অপরিমেয় আত্মত্যাগ ও বীরত্বের কাহিনী। প্রাক্তন থেকে বর্তমান পতাকার আগমনযাত্রা সাক্ষী হয়েছে রক্তক্ষয়ী এক অধ্যায়ের। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, গৌরব, জাতীয়তা আর মহান আত্মত্যাগ মিশে রয়েছে জাতীয় পতাকার লাল-সবুজে।

প্রতিবেদন :

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এ দেশের প্রতিটি মানুষের গর্ব ও অহংকার। এই পতাকা আমরা পেয়েছি দীর্ঘ নয়মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অর্জিত স্বাধীনতার মাধ্যমে। তাই আমাদের জাতীয় পতাকা ও স্বাধীনতা যুদ্ধ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ পতাকা বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনসাধারণকে একত্রিত করেছিল। এ পতাকাতলে দাঁড়িয়ে দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা শপথ করেছিল দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করার জন্য। বীর শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। পতাকার লাল বৃত্ত তাই সব দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধার পবিত্র রক্তের প্রতীক হয়ে আছে। জাতীয় পতাকা তাই আমাদের কাছে গৌরবময় ও তাৎপর্যমন্ডিত। জাতীয় পতাকা শুধু একটি কাপড় নয়। এটি দেশের স্বাধীনতার প্রতীক। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ইতিহাস আবেগের। পাকিস্তানিরা রাইফেল তাক করে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলতে বলেছে। সেই মুহূর্তে ওপাশের মানুষটি মৃতু্যমুখে দাঁড়িয়ে বুকের ওপর রক্ত দিয়ে জাতীয় পতাকার লাল বৃত্ত অঙ্কন করে বলেছেন ‘জয় বাংলা’। মুক্তিযুদ্ধের সময় এমনটা বহুবার ঘটেছে। আমাদের জাতীয় পতাকা এতটাই শক্তিশালী যে, তখন মৃত্যুর আগ মুহূর্তে শেষ আশ্রয় ছিল লাল-সবুজ পতাকা! লাল-সবুজে মিশে রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। এ পতাকা পুরো দেশকে ধারণ করেছে তার বুকে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ইতিহাসের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জড়িয়ে রয়েছে বলেই এর প্রতি আমাদের আবেগটাও অন্যরকম।

জাতীয় পতাকা একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। প্রত্যেক দেশের নিজস্ব প্রতীক হিসেবে পতাকা ব্যবহৃত হয়। পতাকা একক- বস্ত্রবিশেষ, যা কোনো গোষ্ঠী, দল, জাতি, দেশ বা সংগঠনের এমনকি বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের প্রতীক তথা পরিচায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত চারকোণা একটু বড় সাদা বা রঙিন কাপড় ব্যবহৃত হয় পতাকা হিসেবে। পতাকার এক প্রান্ত একটি দন্ডের সঙ্গে বেঁধে ওড়ানো হয়। পতাকার বন্ডে ব্যবহৃত বিশেষ কোনো রঙ, নকশা, প্রতিকৃতি বা চিহ্নের দ্বারা কোনো আদর্শ কিংবা বার্তা উৎকীর্ণ থাকতে পারে। আধুনিক বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রেরই একটি স্বতন্ত্র পতাকা আছে, যা জাতীয় পতাকা হিসেবে বিবেচিত। তেমনিভাবে বাংলাদেশেরও একটি নিজস্ব জাতীয় পতাকা আছে যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে প্রকাশ করে।

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্ত। ঘন উজ্জ্বল সবুজ রঙ বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি, তারুণ্যের উদ্দীপনা ও বিস্তৃত গ্রাম-বাংলার প্রতীক, বৃত্তের গাঢ় লাল রঙ উদীয়মান সূর্য ও স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের প্রতীক। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার এই রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারিভাবে গৃহীত হয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় প্রায় একই রকম দেখতে একটি পতাকা ব্যবহার করা হতো, যেখানে মাঝের লাল বৃত্তে হলুদ রঙের একটি মানচিত্র ছিল। যে ভূখন্ডের জন্য আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে তা প্রদর্শনের জন্য পতাকায় এই মানচিত্র অঙ্কিত হয়েছিল।

জাতীয় পতাকা সাধারণত এবং আইনি বিধিমতে সুনির্দিষ্ট ও নির্ধারিত স্থানে প্রদর্শিত হয়ে থাকে। জাতীয় পতাকা সর্বত্র প্রদর্শন করা যায় না। জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের একটা নিয়ম রয়েছে। ইচ্ছা করলেই যে কেউ গাড়িতে পতাকা ব্যবহার করতে পারেন না। কেননা আইনে বলা হয়েছে, কোনো অবস্থায়ই গাড়ি কিংবা কোনো যান, রেল কিংবা নৌকার খোলে, উপরিভাগে বা পেছনে পতাকা ওড়ানো যাবে না। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ও দপ্তর, যেমন- রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রীর ভবন, জাতীয় সংসদ ভবন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময় এবং কিছু নির্ধারিত ভবনসমূহে সব কর্মদিবসে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। এসব ক্ষেত্রে শুধু সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত পর্যন্ত পতাকা উত্তোলিত রাখতে হবে। এটাই নিয়ম। তবে বিশেষ কারণে রাতে ভবনসমূহে পতাকা উত্তোলিত রাখা যেতে পারে। যেমন- সংসদের রাতের অধিবেশন, রাষ্ট্রপতি বা মন্ত্রীগণের শপথ অনুষ্ঠান চলাকালীন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে, নৌযানে ও বিমানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যাবে। এছাড়া স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা, মন্ত্রী সমমর্যাদার ব্যক্তি, বিদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনের অফিস ও কনসু্যলার পোস্টসমূহে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হয়। বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের প্রধানের গাড়িতে ও তাদের নৌযানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, উপমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাজধানীর বাইরে ভ্রমণকালে গাড়িতে ও নৌযানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন।

জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননামূলক আচরণ হচ্ছে- পতাকা পোড়ানো, পদদলিত করা, ছিঁড়ে ফেলা, কেটে ফেলা ইত্যাদি। আর এ চিত্রটাই এখন ভাসছে জাতির সম্মুখে-জাতীয় পতাকার অর্ধেক ছেঁড়া অংশ। রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর কথা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে জনতার কানে বারবার- ‘জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরনো শকুন’। জাতির পতাকাকে যারা হেয় করেছে প্রকাশ্য দিবালোকে, তারা একই সাথে রাষ্ট্রবিরোধিতার অশনি সংকেত দিয়ে গেছে। সাধারণ জনগণ সংকেত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, রাষ্ট্রকেও উপলব্ধি করতে হবে সাধারণ জনগণকে। জাতীয় পতাকার অবমাননাকারী এই অপরাধীদের রাষ্ট্রকে চিহ্নিত করতে হবে। স্বাধীনতা উত্তরকালে, ১৯৭২ সালে পতাকা আইন করা হয়েছিল। ২০১০-এর জুলাই মাসে এই আইন সংশোধিত হয়, যার পেছনে মূল পর্যবেক্ষণ ছিল বিশেষত নাগরিকদের অজ্ঞতার কারণে জাতীয় পতাকার অবমাননা। এই সংশোধনিতে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত শাস্তি এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ডের বিধান রাখা হয়। না জেনে, না বুঝে আর অতি উচ্ছ্বাসে যারা পতাকা ব্যবহারবিধি লংঘন করেন, তাদের অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে এই শাস্তি বিধান যথাযথ হতে পারে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি বাণিজ্যিক কোনো প্রচারণায়, বিজ্ঞাপনে জাতীয় পতাকার ব্যবহার বিধিবহির্ভূতভাবে করে থাকে, তার জন্য ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ন্যায়সঙ্গত নয়। অপরাধের মাত্রা ভেদে অর্থ জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি করার আইনি বিষয়টি রাষ্ট্রকে বিবেচনায় আনতে হবে।

পতাকা উত্তোলন বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকতে হবে, বাংলাদেশের পতাকার ওপরে অন্য কোনো পতাকা বা রঙিন পতাকা ওড়ানো যাবে না। অন্য দেশের পতাকার সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হলে প্রথমে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হবে। নামানোর সময়ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সর্বশেষে নামাতে হবে। মিছিলে পতাকা বহনের বিধান হচ্ছে, পতাকা মিছিলের কেন্দ্রে অথবা মিছিলের অগ্রগমন পথের ডানদিকে বহন করতে হবে। জাতীয় পতাকার ওপর কোনো কিছু লেখা বা মুদ্রিত করা যাবে না অথবা কোনো অনুষ্ঠান বা উপলক্ষে কোনো চিহ্ন অঙ্কন করা যাবে না। এমনকি জাতীয় পতাকাকে পোশাক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না এবং গায়ে জড়িয়ে রাখা যাবে না। পতাকা উত্তোলন ও নামানোর সময় প্যারেড ও পরিদর্শনের সময় উপস্থিত সবাই পতাকার দিকে মুখ করে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলনের সময় একসঙ্গে জাতীয় সংগীত গাইতে হবে অথবা বাজাতে হবে। পতাকা ব্যবহারের অনুপযোগী হলে তা মর্যাদাপূর্ণভাবে সমাধিস্থ করে নিষ্পত্তি করতে হবে।

পতাকাকে যেনতেনভাবে ব্যবহার করা যাবে না। কবরস্থানে জাতীয় পতাকা নিচু করা যাবে না বা ভূমি স্পর্শ করানো যাবে না। পতাকা কোনো ব্যক্তি বা জড়বস্তুর দিকে নিম্নমুখী করা যাবে না। পতাকা কখনোই আনুভূমিকভাবে বা সমতলে বহন করা যাবে না। সব সময় ঊর্ধ্ব এবং মুক্তভাবে থাকবে। বাংলাদেশের পতাকা কোনো কিছুর আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। তবে শর্ত থাকে যে, কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি পূর্ণ সামরিক মর্যাদা বা আনুষ্ঠানিকতাসহ সমাধিস্থ করা হলে তার শব যানে পতাকা আচ্ছাদনের অনুমোদন করা যেতে পারে। কোনো কিছু গ্রহণ, ধারণ বহন বা বিলি করার নিমিত্তে পতাকা ব্যবহার করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করা বা জাতীয় পতাকার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করলে ওই ব্যক্তিকে ২০১০ সালের ২০ জুলাই প্রণীত আইন অনুযায়ী ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা এক বছরের কারাদন্ড কিংবা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। জাতীয় পতাকার অবমাননা করার অর্থ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা। স্বাধীন বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। আবেগের বশে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে গিয়ে অনেক কষ্টে অর্জিত এ পতাকার প্রতি যদি অবমূল্যায়ন করা হয়, তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা কষ্ট পাবে। অনেক কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছেন। তাই জাতীয় পতাকার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব এবং নাগরিক কর্তব্যও বটে।

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা রাষ্ট্র ও জাতি হিসেবে আমাদের স্বকীয়তার প্রতীক, আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্রের অখন্ডতার এক নির্ভরযোগ্য চিহ্ন। আনন্দ আর উদ্দীপনার এক শিহরণ সৃষ্টি হয় আমাদের হৃদয়ে, যখন জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়। জাতীয় পতাকার প্রতি অবিচল আস্থা, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা শেখানো হয় অতি শৈশবকাল থেকে- যখন একজন শিশু স্কুলে ভর্তি হয় ঠিক সে সময় থেকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনে জাগ্রত হয় স্বজাত্যবোধ।

মা মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে যেমন মনুষ্যত্বের পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনি মাতৃভূমির সঙ্গে জাতীয় পতাকাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই লাল-সবুজের পতাকার প্রতি অবিচল আনুগত্য ও শ্রদ্ধা আমাদের চেতনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের সার্বভৌমত্বের নিদর্শন লাল-সবুজের পতাকা। এই পতাকা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় শহীদের বুকের তাজা রক্তে সিক্ত সবুজ জমিনের কথা। স্মরণ করিয়ে দেয় সেসব মানুষের কথা যারা নির্দ্বিধায়, অকাতরে প্রাণ দিয়েছে এই ছাপ্পান্নো হাজার বর্গ মাইলের ভূখন্ডের মুক্তির জন্য। লাল-সবুজের এই পতাকা তাই আমাদের হৃদয়ে জাগায় দেশপ্রেম, আর দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার প্রেরণা। জাতীয় পতাকাকে অবমাননা বা অসম্মানকে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। তার অপব্যবহার রোধে আমাদের সরকারি তৎপরতার পাশাপাশি নাগরিক সমাজকেও দায়িত্বশীল হতে হবে।

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ : সাবেক উপ-মহাপরিচালক বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, কলামিস্ট ও গবেষক

২০ মার্চ ২০২১, দৈনিক যায় যায় দিন

জাতীয় পতাকার ইতিহাস নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বই

 

To top