বাংলাদেশের জাতীয় শ্লোগান : জয় বাংলা

জয় বাংলা একটি স্লোগান যা বাংলাদেশে ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্যে ব্যবহৃত হয়। এটি বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান।[] ১৯২২ সালে কাজী নজরুল ইসলাম তার ভাঙার গান কাব্যে ‘পূর্ণ-অভিনন্দন’ কবিতায় সর্বপ্রথম “জয় বাঙলা” শব্দ যুগল ব্যবহার করেন। নজরুলের কাব্যে উৎপত্তির পর কালক্রমে এটি স্লোগানে পরিণত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই স্লোগান জনগণকে তাদের মুক্তিসংগ্রামে প্রবলভাবে প্রেরণা যুগিয়েছিল। ভারতের বাঙালি অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গত্রিপুরাবরাক উপত্যকার লোকেরাও বাঙালির ঐক্য বোঝাতে এর ব্যবহার করে থাকে। এর আগে বাঙালি কখনো এত তীব্র, সংহত ও তাৎপর্যপূর্ণ স্লোগান দেয় নি, যাতে একটি পদেই প্রকাশ পেয়েছে রাজনীতি, সংস্কৃতি, দেশ, ভাষার সৌন্দর্য ও জাতীয় আবেগ।[] জয় বাংলা স্লোগান ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন বাঙালির প্রেরণার উৎস। সফল অপারেশন শেষে বা যুদ্ধ জয়ের পর অবধারিত ভাবে মুক্তিযোদ্ধারা চিৎকার করে “জয় বাংলা” স্লোগান দিয়ে জয় উদ্‌যাপন করত।[]

উদ্ভব

জয় বাংলার উৎপত্তি সম্বন্ধে জানা যায় যে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা ছিলেন মাদারীপুরের স্কুল শিক্ষক পূর্ণচন্দ্র দাস। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন এর জন্য জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হন তিনি। তার আত্মত্যাগ, তার স্বজাত্যবোধে মুগ্ধ হয়ে পূর্ণচন্দ্র দাস মহাশয়ের কারামুক্তি উপলক্ষে কালিপদ রায়চৌধুরীর অনুরোধে কবি নজরুল রচনা করেন ভাঙার গান কাব্যগ্রন্থের ‘পূর্ণ-অভিনন্দন’ (১৯২২) কবিতাটি।[][] এই কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম প্রথম ‘জয় বাংলা’ শব্দটি ব্যবহার করেন।[][][] তার রচিত ‘বাঙালির বাঙলা’ প্রবন্ধেও জয় বাংলা পাওয়া যায়। নিচে ‘পূর্ণ-অভিনন্দন’ কাব্য থেকে উদ্ধৃত হল:[]

জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র, জয় জয় আদি অন্তরীণ,
জয় যুগে যুগে আসা সেনাপতি, জয় প্রাণ আদি-অন্তহীন।

একসূত্রে বলা হয়েছে যে ১৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে শিক্ষা দিবস (১৭ মার্চ) যৌথভাবে পালনের জন্য কর্মসূচি প্রণয়নের সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ-এর আহুত সভায় তৎকালীন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আফতাব আহমেদ ও চিশতী হেলালুর রহমান “জয় বাংলা” স্লোগানটি সর্বপ্রথম উচ্চারণ করেন।[১০] তবে ১৯ জানুয়ারি ১৯৭০-এ ঢাকা শহরের পল্টনের এক জনসভায় ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান তার ভাষণে সর্বপ্রথম “জয় বাংলা” স্লোগানটি উচ্চারণ করেছিলেন বলে প্রচলিত আছে।[১১] বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে প্রথম “জয় বাংলা” স্লোগানটি উচ্চারণ করেন ৭ মার্চ ১৯৭১-এ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসভার ভাষণে।[১২]

এই স্লোগান-এর উৎপত্তি সম্পর্কে আর একটি তথ্য পাওয়া যায় তা হল, কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদনায় প্রকাশিত নবপর্যায় (১৯৪০) নবযুগ পত্রিকার ৩রা বৈশাখ ১৩৪৯ বঙ্গাব্দ (১৯৪২) সংখ্যায় ‘বাঙালির বাঙলা’ নামে প্রকাশিত প্রবন্ধে তিনি (কাজী নজরুল ইসলাম) বলেন:[১৩]

‘বাঙালিকে, বাঙালির ছেলেমেয়েকে ছেলেবেলা থেকে শুধু এই এক মন্ত্র শেখাও;
এই পবিত্র বাংলাদেশ
বাঙালির-আমাদের।
দিয়া ‘প্রহারেণ ধনঞ্জয়’
তাড়াব আমরা করি না ভয়
যত পরদেশী দস্যু ডাকাত
রামাদের গামা’দের
বাঙলা বাঙালির হোক। বাঙালির জয় হোক। বাঙালির জয় হোক।’[১৪]
— বাঙালির বাঙলা, কাজী নজরুল ইসলাম

১৯৪২ সালে বঙ্গবন্ধু কলকাতায় ছিলেন, নবযুগ পত্রিকার সেই উদ্দীপ্ত প্রবন্ধ তাকে তখন বা পরে উজ্জীবিত করে থাকতে পারে।[১৫]

আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ১৯৭১ তারিখে প্রদত্ত তার বিখ্যাত সাতই মার্চের ভাষণ সমাপ্ত করেছিলেন “জয় বাংলা” উচ্চারণ করে। এই ভাষণের পর থেকে এটি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে। এর কাছাকাছি শব্দ ছিল ফার্সি “জিন্দাবাদ”। তৎকালীন বর্ষীয়ান জননেতা মাওলানা ভাসানী ১৯৭১-এর শুরু থেকে “স্বাধীন বাংলা জিন্দাবাদ”, “আযাদ বাংলা জিন্দাবাদ” প্রভৃতি স্লোগান ব্যবহার করতেন। ১৯৭১-এর মার্চ থেকে জনসভা, মিছিলে এবং প্রচারণায় “জয় বাংলা” স্লোগানটি ব্যবহৃত হতে থাকে। ২৭ মার্চ ১৯৭১ সালে মেজর জিয়াউর রহমান অস্থায়ী কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে যে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন তার শেষেও তিনি “জয় বাংলা” উচ্চারণ করেন।[১৬] মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন সময় “জয় বাংলা” ব্যবহার করা হতো। এই বেতার কেন্দ্রের স্বাক্ষরসঙ্গীত ছিল জয় বাংলা, বাংলার জয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ১১ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে প্রচারিত প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহ্‌মদের প্রথম বেতার ভাষণটি শেষ হয়েছিল‍ “জয় বাংলা, জয় স্বাধীন বাংলাদেশ‍” স্লোগান দিয়ে। আজও স্লোগানটি সমান ভাবে রাজনৈতিক স্লোগান হিসাবে ব্যবহার হয় ৷[১৭]

২০১১ ও ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান যে, কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকেই বঙ্গবন্ধু এই “জয় বাংলা” স্লোগানটি নিয়েছিলেন।[][]

বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান ঘোষণা

২০২০ সালের ১০ মার্চ জয় বাংলা স্লোগানকে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হিসেবে গ্রহণের জন্য হাইকোর্ট রায় প্রদান করেন। বাংলাদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।[১৮]

জয় বাংলা কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণার পর জাতীয় দিবসগুলোতে উপযুক্ত ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারী ও রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকর্তা সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান যাতে উচ্চারণ এবং সারাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাত্যহিক সমাবেশ শেষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ যাতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করেন সেই আদেশ প্রদান এবং তা আগামী তিন মাসের মধ্যে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়।[১৯]

উল্লেখ্য, জয় বাংলা কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা প্রদান চেয়ে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদ হাইকোর্টে রিট করেন।[১৮] ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।[২০] ২ মার্চ ২০২২ জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে।[২১] এতে বলা হয়:[২২]

১। (ক) ‘জয় বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে।

(খ) সাংবিধানিক পদাধিকারীগণ, দেশে ও দেশের বাইরে কর্মরত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দ সকল জাতীয় দিবস উদযাপন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করবেন।

(গ) সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাত্যহিক সমাবেশ সমাপ্তির পর এবং সভা-সেমিনারে বক্তব্যের শেষে শিক্ষকগণ ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করবেন।

২। ইহা অবিলম্বে কার্যকর হবে।[২৩]

তথ্যসূত্র

  1. “‘জয় বাংলাএখন জাতীয় স্লোগান প্রথম আলো। ২০২২০৩০২ সংগ্রহের তারিখ ২০২৩০৫২৬[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
    1.  আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম – হুমায়ুন আজাদ, দ্বিতীয় সংস্করণ ফেব্রুয়ারি ২০০৩, পৃষ্ঠা ২৬, আগামী প্রকাশনী
    1.  মুনতাসির মামুন সম্পাদিত। কিশোর মুক্তিযুদ্ধ কোষ। সময় প্রকাশন। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 984-458-70114-0070-9
    1.  যেভাবে লেখা হলো নজরুলেরপূর্ণঅভিনন্দনকবিতাটি kalerkantho.com দৈনিক কালের কণ্ঠ ২৮ আগস্ট ২০১৫ সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০২১
    1.  মমতারজয় বাংলাস্লোগান কি আদৌবাংলার স্লোগান‘?” ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। ৩০ জানুয়ারি ২০২১ সংগ্রহের তারিখ মে ২০২১
    1.  হুদামুহম্মদ নূরুল (২৭ আগস্ট ২০১৫) নজরুলেরজয় বাংলা‘” bdnews24.com বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ৩০ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০২১
    1. ↑ ঝাঁপ দিন:  “Joy Bangla was inspired by Nazrul’s poetry: PM” dhakatribune.com ঢাকা ট্রিবিউন ১৩ এপ্রিল ২০১৩ সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০২১
    1. ↑ ঝাঁপ দিন:  “‘জয় বাংলা সুলুকসন্ধান rodoshee.com ১০ মার্চ ২০২০। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০২১
    1.  ভাঙার গান nazrul-rachanabali.nltr.org সংগ্রহের তারিখ ২০২১০৫২৫
    1.  নুরুজ্জামান মানিক, স্বাধীনতা যুদ্ধের অপর নায়কেরা, ২০০৯, শুদ্ধস্বর, পৃষ্ঠা ৫৫
    1.  সাক্ষাৎকার: আবদুর রব নভেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০০৯
    1.   আব্দুর রবের সাক্ষাৎকার নভেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২০০৯
    1.  নজরুলেরজয় বাংলা‘” arts.bdnews24.com ২০১৫০৮২৭। ২০২১০১৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা সংগ্রহের তারিখ ২০২১০৫২৫
    1.  বাঙালির আবশ্যিক আশ্রয় : নজরুল : ফরিদ আহমদ দুলাল www.bhorerkagoj.com ২০২১০৫২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা সংগ্রহের তারিখ ২০২১০৫২৫
    1.  সৌমিত্র শেখর। “‘জয় বাংলাস্লোগান কোনো কবিতা থেকে আসেনি risingbd.com সংগ্রহের তারিখ ২০২১০৫২৫ এই পত্রিকায় নজরুলের প্রবন্ধবাঙালির বাঙলাপ্রকাশ পায় ৩রা বৈশাখ, ১৩৪৯ বঙ্গাব্দ সংখ্যায়। লেখার শিরোনামটিই অনন্য এবং ১৯৪২ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে খুবই আগ্রহব্যঞ্জক, বিশেষ করে বাঙালিদের জন্য। নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধু সেটি পাঠ করেছেন এবং শুধু তিনি নন, বাঙালি ছাত্রনেতাদের অনেকেই সেটি পড়ে থাকবেন। এই প্রবন্ধের প্রভাবেই বঙ্গবন্ধুর মনেজয় বাংলাস্লোগানের ভ্রুণ স্থাপিত হয়েছিল যা পরে তিনি বাঙালির মুক্তির স্লোগান হিসেবে ছড়িয়ে দেন
    1.  স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা
    1.  দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীনতা, মুহাম্মদ নূরুল কাদির, ১৯৯৭, আইএসবিএন ৯৮৪-৩০-০২২৯-৬
    1. ↑ ঝাঁপ দিন:  “‘জয় বাংলাবাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে প্রথম আলো। ১০ মার্চ ২০২০ সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০২০
    1.  জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণার রায় bdnews24 ১০ মার্চ ২০২০। মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০২০
    1.  ‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগান করার সিদ্ধান্ত, কালের কণ্ঠ, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২
    1.  প্রতিবেদক, বিশেষ। “‘জয় বাংলাএখন জাতীয় স্লোগান প্রথম আলো সংগ্রহের তারিখ ২০২২০৩২৬
    1.  প্রজ্ঞাপন (পিডিএফ) বাংলাদেশ গেজেট। মার্চ ২০২২
    1.  “‘জয় বাংলাএখন জাতীয় স্লোগান, প্রজ্ঞাপন জারি দৈনিক ইত্তেফাক। মার্চ ২০২২

জয় বাংলা শ্লোগান বিষয়ক ভিডিও

প্রতিবেদন

https://dainikazadi.net/%E0%A6%9C%E0%A7%9F-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A7%9F-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A6%BE

জয় বাংলা হবে জাতীয় স্লোগান

| সোমবার , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:৩৫ পূর্বাহ্ন

সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগদান করে সভাপতিত্ব করেন এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে মন্ত্রিসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। খবর বাসসের।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আজ একটা বিষয় কেবিনেটে এসেছে, সেটা হলো ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান করার বিষয়ে। এটা কেবিনেটে আলোচনা হয়েছে। ২০২০ সালে হাই কোর্টে একটি রায়ও আছে, ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা কেবিনেটে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে, ‘জয় বাংলা’কে কেবিনেট থেকে একটি সার্কুলার দিয়ে জাতীয় স্লোগান হিসেবে প্রচার করে দিতে হবে। আমরা অবিলম্বে একটা নোটিফিকেশন করে দেব।
নোটিফিকেশন করতে কতদিন লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দু- চারদিনের বেশি লাগার কথা নয়। কোথায় কোথায় ‘জয় বাংলা’ বলতে হবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, তিন-চারটি ক্যাটাগরির কথা জাজমেন্টে আছে। সাংবিধানিক পদধারীগণ, রাষ্ট্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী রাষ্ট্রীয় বা সরকারি অনুষ্ঠানের শেষে এটা বলবেন। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদরাসাসহ তাদের কোনো সভা-সেমিনার যদি হয়, অ্যাসেম্বলি বা যে কোনো ধরনের সমাবেশ হলে সেখানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে হবে। যদি কোনো অনুষ্ঠান হয়, অ্যাসেম্বলি হয় সরকারি-বেসরকারি যারা থাকবেন জয় বাংলা স্লোগান ব্যবহার করবেন। এটা কেবিনেটের সিদ্ধান্ত।

https://www.newsbangla24.com/column/182038/Joy-Bangla-is-not-just-a-slogan

জয় বাংলা শুধু স্লোগান নয়

হীরেন পণ্ডিত

৫ মার্চ, ২০২২ ১৭:০৪

১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার আগেই রাজপথে ছাত্রদের মিছিলে উচ্চারিত হতে থাকে জয় বাংলা স্লোগানটি। ছাত্র আন্দোলনের মুখে বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার সময়টাতেও এই স্লোগান দিয়েছিলেন ছাত্রনেতারা। একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু মূল নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যার মূলে ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা। জয় বাংলা স্লোগান জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত করে একাত্তরে।

‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার এই নির্দেশনা জারি করেছে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

কখন ও কোথায় জয় বাংলা স্লোগান ব্যবহার করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘তিন-চারটি ক্যাটাগরির কথা উচ্চ আদালতের রায়ে উল্লেখ করা আছে বলে জানিয়েছে। সাংবিধানিক পদধারী, রাষ্ট্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী রাষ্ট্রীয় বা সরকারি অনুষ্ঠানের শেষে এটা বলবেন। এ ছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-ইউনিভার্সিটিসহ তাদের কোনো সভা-সেমিনার যদি হয়, অ্যাসেম্বলি বা যেকোনো ধরনের সমাবেশ হলে সেখানে জয় বাংলা স্লোগান দিতে হবে। এটা জাতীয় স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। এটাই কেবিনেটের সিদ্ধান্ত।’

এমন সিদ্ধান্তে সবাই আনন্দিত। মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, জয় বাংলা মুক্তিযোদ্ধাদের স্লোগান, জয় বাংলা মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান। বিশ্বের প্রায় ষাটটি দেশে জাতীয় স্লোগান আছে। আমাদের ছিল না। জয় বাংলা আমাদের জাতীয় ঐক্য ও প্রেরণার প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে মিশে থাকা জয় বাংলা স্লোগানকেই করা হয়েছে জাতীয় স্লোগান। এটি যেমন আশাজাগানিয়া খবর তেমনি গৌরবেরও বিষয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে। সাংবিধানিক পদাধিকারীরা, দেশ ও দেশের বাইরে কর্মরত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সব জাতীয় দিবস উদযাপন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষে জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করবেন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রত্যেক দিনের সমাবেশ শেষ হওয়ার পর এবং সভা-সেমিনারে বক্তব্যের শেষে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করবেন।

বাংলা একাডেমির অভিধান অনুসারে ‘জয়’ শব্দের অর্থ হচ্ছে- ‘সাফল্য, বিজয়, যুদ্ধাদি’ দ্বারা অধিকার, পরাভূত করা, দমন, শত্রু দমন, আনন্দ, ফুর্তি, খুশি ইত্যাদি। জয়বাংলার অর্থ দাঁড়ায় বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জয়। আমাদের অস্তিত্বে এই জয়বাংলা শব্দের শ্লোগানের ব্যবহার ও কার্যকারিতা আরও অনেক ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। ‘বাংলা বাঙালির হোক, বাংলার জয় হোক, বাঙালির জয় হোক।’ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই অবিনাশী পঙক্তিমালা; সাতকোটি কণ্ঠে বেজে ওঠে বাঙালির হৃদয়ে লালিত ‘জয় বাংলা’ স্লোগান।

১৯৪৭-এর পর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন স্বাধিকার আন্দোলনের অগ্রপথিক। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। সারা বাংলায় সেই একই স্লোগান জয় বাংলা, জয় শেখ মুজিব দেয়া হয়। সরাসরি এই নামকরণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের গণ্ডি অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত ‘জয়বাংলা’ স্লোগান হয়ে যায় সব মুক্তিকামী মানুষের।

জয় বাংলা স্লোগান জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত করেছিল মুক্তিযুদ্ধে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সেই ঐক্যে ফাটল ধরে। গত ৫০ বছরে এসব বিষয়। ‘জয় বাংলা’ মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান। এই স্লোগান কীভাবে বাংলাদেশের হয়েছিল এ নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে।

১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার আগেই রাজপথে ছাত্রদের মিছিলে উচ্চারিত হতে থাকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান।

১৯৭০ সালের ২৮ নভেম্বর এক সাংবাদিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেন-“ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লাখ মারা গেছে, স্বাধিকার অর্জনের জন্য বাংলার আরো ১০ লাখ প্রাণ দিবে”। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের মোট ১৬৯ আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জয় বাংলা ধ্বনিতে আওয়ামী লীগ জয় করে ১৬৭ আসন। প্রমাণিত হয় বাঙালি জাতির বজ্রকঠিন ঐক্য। আরও অপরিসীম হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু মুজিবের মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্র জয় বাংলার শক্তি! যা ছিল- বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ধর্ম-বর্ণ-মতভেদ নির্বিশেষে আমাদের একাত্ম হওয়ার মূল মন্ত্র, বাংলার মানুষের বুকের গভীরে বাঙালিত্ব জাগানোর সফল হাতিয়ার, সাধারণ বাঙালিকে বিশ্বসেরা বীর বাঙালিতে পরিণত করার কার্যকর দাওয়াই।

‘জয় বাংলা/ জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘তোমার নেতা আমার নেতা/ শেখ মুজিব, শেখ মুজিব, বীরবাঙালি অস্ত্র ধরো/ বাংলাদেশ স্বাধীন করো, তোমার আমার ঠিকানা/ পদ্মা মেঘনা যমুনা, জাগো জাগো/ বাঙালি জাগো। ‘জয় বাংলা, জয় বাংলা, জয় বাংলা…’।

স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা আসম আব্দুর রব ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তোলন করেন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। সেইসঙ্গে বার বার উচ্চারিত হয় জয় বাংলা স্লোগান। ভঙ্গ করা হয় কারফিউ। ‘জয় বাংলা, জয় বাংলা’ ধ্বনিতে উদ্বেলিত বাঙালি।

পাকবাহিনীর হামলায় রাজপথে হতাহত হয় অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষ! ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে পরিবেশন করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’- ‘বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত’ হিসেবে গাওয়া হয়। সেইসঙ্গে উত্তোলন করা হয় আমাদের জাতীয় পতাকা। প্রচার করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘোষণাপত্র।

৭ মার্চে দেয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা অনুসারে যার যা-কিছু আছে তাই নিয়ে দেশের সব মানুষ এই বাংলাকে শত্রুমুক্ত করার জন্য ‘জয় বাংলা’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মরণপণ যুদ্ধে। সবার বুকে স্পন্দিত ও মুখে উচ্চারিত আকাশে-বাতাসে প্রতিধ্বনিত জয়বাংলা স্লোগান ছিল এই যুদ্ধেরও প্রধান হাতিয়ার।

১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার আগেই রাজপথে ছাত্রদের মিছিলে উচ্চারিত হতে থাকে জয় বাংলা স্লোগানটি। ছাত্র আন্দোলনের মুখে বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার সময়টাতেও এই স্লোগান দিয়েছিলেন ছাত্রনেতারা। একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু মূল নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যার মূলে ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা। জয় বাংলা স্লোগান জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত করে একাত্তরে। মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস অর্জনের পথ ছিল কণ্ঠ আকাশে তুলে জয় বাংলা স্লোগান দেয়া। আর তাদের বীরত্ব প্রকাশের ভাষাটিও ছিল জয় বাংলা।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিকামী মানুষ বার বার উচ্চারণ করে জয়বাংলা স্লোগান। ‘জয়বাংলা’ নামে রণাঙ্গন থেকে তখন প্রকাশিত হতো একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। সবার বুকে ও মুখে ছিল জয়বাংলা স্লোগান।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘জয় বাংলার লোক’ অভিহিত করেই আমাদের স্বাধীনতার পক্ষের লাখ লাখ নিরীহ মানুষকে নির্যাতন ও হত্যা করেছে পাকিস্তানের সমর্থক বাহিনী। অবশেষে বীর বাঙালির ৯ মাসের মরণপণ যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বিকেল ৫ টায় বাংলাদেশ ও ভারতের মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সৈন্যরা করে শর্তহীন আত্মসমর্পণ। বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা লাভ করে মুজিবের চির কাঙ্ক্ষিত স্বাধীন বাংলাদেশ।

১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন ও দিল্লি হয়ে শেষে ১০ জানুয়ারি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের রক্তাক্ত মাটিতে পা রাখেন বিশ্বনন্দিত বিজয়ী বীর বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সবার কণ্ঠে সেদিন জয়বাংলাই ছিল প্রিয় নেতাকে বরণ করার স্লোগান।

জয়বাংলা আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সফল হাতিয়ার! মূলত এই হাতিয়ারের বলেই আমরা পরাভূত করেছি পাহাড় সমান প্রতিপক্ষ। জয় করেছি আমাদের আসল পরিচয় বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মায়ের মুখের বাংলাভাষা ও মাতৃভূমি বাংলাদেশ। কিন্তু তা সঠিকভাবে জানে না আমাদের নবীন প্রজন্ম!

জয় বাংলা উপমহাদেশে সবচেয়ে প্রেরণাদায়ী, তাৎপর্যপূর্ণ স্লোগান। অথচ ভারতে ‘জয়হিন্দ’ ও পাকিস্তানে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ যে সার্বজনীনতা পেয়েছে, জয় বাংলার ক্ষেত্রে তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে খুবই বন্ধুর পথ। সর্ব্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরেও এখন জয় বাংলা রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জয় বাংলা কিন্তু অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ এখানে এসেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন সময় ‘জয় বাংলা’ ব্যবহার করা হতো। এই বেতার কেন্দ্রের স্বাক্ষরসংগীত ছিল জয় বাংলা, বাংলার জয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ১১ এপ্রিল ১৯৭১ প্রচারিত প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের প্রথম বেতার ভাষণটি শেষ হয়েছিল ‘জয় বাংলা, জয় স্বাধীন বাংলাদেশ’ স্লোগান দিয়ে।

যারা নতুন প্রজন্ম, তাদের একাত্তর দেখা হয়নি; তবে প্রথমবারের মতো ‘জয় বাংলা’র শক্তি অনুভব করেছে ১৯৯২ সালে দিবসে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গণ-আদলত গঠনের সময়। ২০১৩ সালে দ্বিতীয়বার অদেখা মুক্তিযুদ্ধের স্বাদ পেয়েছে কোনো রকম দলীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়া গড়ে ওঠা শাহবাগের গণ-জাগরণের সময়। অনেক বছর পর রক্ত দিয়ে কেনা হারিয়ে যাওয়া প্রিয় ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয় সারা দেশ। জয় বাংলা কোনো দলীয় স্লোগান নয়, এর মালিক বাংলাদেশ তাই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে দল-মত নির্বিশেষে আপামর গণমানুষের মুখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উচ্চারিত হয় জয় বাংলা

এক সময় ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটিকে নির্বাসিত করা হয়েছিল কিন্তু বঙ্গবন্ধু আবার ফিরে এসেছেন আরও তেজোদীপ্তভাবে। ‘জয় বাংলা’কে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা অনেক সহজতর হয়েছে। যেহেতু সর্ব্বোচ্চ আদালত জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল দেশ পরিচালনা করছে তাই কাজটি সহজ হয়েছে।

বিভক্তির রাজনীতি থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্লোগানকেও দলীয় স্লোগান হিসেবে দেখিয়ে বিতর্কিত করা হয়েছে। অবশেষে জয় বাংলা পেল স্বীকৃতি জাতীয় স্লোগান হিসেবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক

https://www.channelionline.com/%e0%a6%9c%e0%a7%9f-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%b9%e0%a7%8b%e0%a6%95-%e0%a6%86%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%b2

জয় বাংলাহোক আত্মার স্লোগান

হাসিনা আকতার নিগার

 ১:২৭ অপরাহ্ণ ১২, ডিসেম্বর ২০১৯

৭১ দেখিনি! তবে সে সময়ের স্লোগানগুলো আলোড়িত করে মনকে বাংলা মায়ের সন্তান হিসাবে।  ৭১ নিয়ে বির্তক হতে দেখলে ব্যক্তি জীবনের অনুভূতিতে বেদনার সুর বেজে উঠে।

আইনজীবী ড.বশির আহমেদ ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে এক রিট আবেদন করেন। যার প্রেক্ষিতে গত ১০ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ১৬ ডিসেম্বর থেকে রাষ্ট্রীয় সব অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বলার মৌখিক আদেশ দেন।

এ ঘোষণা জাতির জন্য আইনগতভাবে প্রত্যাশার আলো। কিন্তু জাতিগত বাঙালি বোধের আবেগে পীড়াদায়ক। বঙ্গবন্ধু, বাঙালি, বাংলাদেশ – এ ৩টি শব্দ দিয়ে জাতি লাল সবুজের পতাকার জন্য লড়াই করেছে ১৯৭১ সালে। আর যুদ্ধের সে সময়টাতে সারাদেশে একটা স্লোগানই বাংলার মানুষকে এক করেছে, আর তা হলো ‘জয় বাংলা’।

স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে এই দেশের মানুষের মাঝে ধর্ম, বর্ণ বা রাজনৈতিক ভেদাভেদ ছিলো না।  সবার পরিচয় ছিল একটাই ‘আমি জয় বাংলার লোক।’ এমনকি ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী বাঙালিদের বলা হত জয় বাংলার মানুষ। আবার সে সময় চোখের একটি রোগকে বলা হত ‘জয় বাংলা রোগ’।

সাধারণ মানুষের প্রচলিত কথার অনেক উর্ধ্বে ছিল ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মর্মার্থ। ৭ মার্চের স্বাধীনতার ভাষণ শেষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্ঠের ‘ জয় বাংলা ‘ স্লোগানটি আজও শিহরিত করে মানুষকে। এ স্লোগানে উচ্চারিত প্রতিটি অক্ষর বাংলা মায়ের সন্তানদের দেশত্ববোধকে জাগ্রত করে আপনা হতে৷ আর সে কারণে বাংলার মুক্তি সেনারা ৭১ এ যুদ্ধের মাঠে এই একটি স্লোগান দিয়ে পরাজিত করেছেন পাকিস্তানিদের।

যে স্লোগানে সমগ্র জাতি এক হয়েছে, ধমনীতে জেগেছে প্রতিবাদ প্রতিরোধের স্পৃহা ; সে  স্লোগানকে আজীবন ধারণ করতে না পারা বিবেককে দংশন করে দেশ প্রেমীদের।

তারপর স্বাধীন বাংলাদেশের যুদ্ধের গল্প শুনতে শুনতে বড় হওয়া ৭১ পরর্বতী প্রজন্মের কাছে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি হয়ে গেল একটি রাজনৈতিক দলের স্লোগান। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, ‘বাংলাদেশ চিরজীবী হোক’ -স্লোগান এসেছে রাষ্ট্রীয়ভাবে৷ স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও জয় বাংলা স্লোগানকে আর আত্মিকভাবে একাত্ম হয়ে ধারণ করতে পারেনি বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ।  এ ব্যর্থতার দায় রাজনৈতিক দলের। তারা নিজেদের স্বার্থে সুবিধামত ব্যবহার করছে বাঙালির আবেগকে। জাতিকে এক পতাকার তলে রাখার বদলে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানটি নিষিদ্ধ হলো ৭৫ পরর্বতী সময়ে। এটি হলো আওয়ামী লীগের স্লোগান। রাজনৈতিক মত বিরোধকে প্রাধান্য দেয়া নেতারা ভুলে গেল, বাংলার মাটিতে তারাও লড়াই করেছে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে।

তবে নির্মম সত্য হলো, যারা জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করতে পারে; তাদের কাছে দু অক্ষরের স্লোগানের কি বা মুল্য থাকবে!

বাঙালির দেশ প্রেম এখন রাজনীতিবিদের খেলার হাতে বন্দি। জয় বাংলাকে দলীয় স্লোগানের ফ্রেমে আবদ্ধ করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ‘জয়বাংলা ও বঙ্গবন্ধু ‘ কোন দল বা ব্যক্তির সম্পদ নয়। এ চিন্তা আর চেতনাকে ধারণ করতে পারেনি বলে আজ বাংলাদেশে হাইকোর্টের আদেশের প্রয়োজন হয় ‘ জয় বাংলা ‘ স্লোগানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবহারের জন্য।

অথচ ভারতে দল মত নির্বিশেষে গান্ধীজির ছবি আর জয় হিন্দ শ্লোগানকে যুগ যুগ ধরে ধারণ করে আসছে। এ বিষয়গুলোতে তাদের কোন মতাভেদ নেই। দেশের স্বার্থে জয় হিন্দ বলে তারা এক হয়ে যায়৷ আর বাংলাদেশে ক্ষমতার পালা বদলে জাতির পিতার ছবির অবমাননা অতীতে বারবার হয়েছে। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বলবে এটা চিন্তা করা ছিল কল্পনাতীত।

হাইকোর্টের আদেশ নিয়ে কথা বলা অন্যায়।  তবু ‘ জয় বাংলা ‘ স্লোগানের নির্দেশ দেখে সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন জাগে। আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বলে এ আদেশ কার্যকর হবে। যদি আগামীতে এ চিত্র না থাকে, তখন আইন কতোটা কার্যকর হবে? আরেক রিটে বদলে যাবে কি আদেশ? দেশের সংবিধানে আজ অবধি এ বিষয়টি পরিস্কারভাবে সংযুক্ত হয়নি। সেখানে মানুষের মনের প্রশ্ন অবান্তর নয়।

আবেগ এবং আইনের বিপরীতমুখী অবস্থানে মাননীয় আইনজীবীর এ রীট সাধুবাদের যোগ্য। ‘ জয় বাংলা ‘ স্লোগানটি জাতির প্রাণকে সঞ্চারিত করেছিল বলে লাল সবুজের বিজয় পতাকা আকাশে উড়েছে। তাই এ স্লোগানটিকে আত্মিকভাবে ধারণ করে প্রতিটি বাঙালি দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে, এটাই প্রত্যাশা সবার কাছে। কেননা একটি দেশের প্রকৃত স্বাধীনতা আসে অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে। আর বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির অগ্রযাত্রায় ‘ জয় বাংলা ‘ স্লোগানটি আত্মার টানে বেজে উঠলেই জাতি উদীপ্ত হবে নতুন এক বাংলাদেশের জন্য।

( বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আইএর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

https://www.alokitobangladesh.com/print-edition/editorial/114514/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%99%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A7%8E%E0%A6%B8-%E0%A6%9C%E0%A7%9F-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%A8

বাঙালির শক্তির উৎসজয় বাংলাস্লোগান

সামছুল আলম দুদু এমপি, রাজনীতিক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য

https://www.alokitobangladesh.com/templates/desktop-v1/images/reporter.pngপ্রিন্ট সংস্করণ

https://www.alokitobangladesh.com/templates/desktop-v1/images/clock.png০০:০০, ১৩ এপ্রিল, ২০২২

‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণাদায়ক এক অনন্য অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত। সেই বিবেচনার আলোকে ‘জয় বাংলা’ আজ আমাদের জাতীয় স্লোগানের মর্যাদায় অভিসিক্ত হয়েছে। বাঙালির মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাসের খেরোখাতায় অমর বাণী হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকলেও এই স্লোগানকে বিজাতীয় ভাষা মনে করে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র জয় বাংলাকে নির্বাসনে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল। জয় বাংলা, একটি অনুভূতি ও আবেগের ভাষা হলেও এর চিরন্তন আবেদনই আমাদের স্বাধীনতা তথা মুক্তির ঠিকানা খুঁজে দিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এ উপমহাদেশে বাঙালি ও বাংলা ভাষার মর্যাদাকে নিয়ে দারুণভাবে ছেলেখেলা হয়েছে। শতাব্দী পর শতাব্দী শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে বাঙালি। আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত বাঙালি জাতির মৌলিকত্ব খাদের কিনারায় পৌঁছে গিয়েছিল। মোগল আমলের পরে দুইশত বছরেরও বেশি সময় ব্রিটিশরা এ অঞ্চলের অধিকর্তা হিসেবে বাঙালির ওপর চরম অপশাসন চাপিয়ে দিয়েছিল। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কশাঘাতে আমরা ছিন্নভিন্ন জাতি হিসেবে বসবাস করছিলাম। ব্রিটিশরাজদের দাসত্ব থেকে মুক্তির প্রয়াসে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বাঙালিরা শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিলেও ব্রিটিশরাজমুক্ত বাংলাদেশে বাঙালিরা রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভেঙে ভারত-পাকিস্তান নামে তিন খ-ে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ব্রিটিশদের কূটচালে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হলেও ভারত অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করে।

কিন্তু পাকিস্তান সাম্প্রদায়িকতাকেই আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। মূলত এটা ছিল ইংরেজদের ষড়যন্ত্র। স্থায়ীভাবে একটা সমস্যা জিইয়ে রেখে রক্তপাতহীন বিনাযুদ্ধে ভারতবর্ষ ছেড়ে চলে যায়। একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার বীজ রোপণ করে যায়। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে একেবারেই বেমানান। উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলের বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষিতের হার ছিল খুবই কম। পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী হিসেবে মুসলমানদের পরিচিত ছিল বিশ্বব্যাপী। তদানীন্তন শিক্ষিত কতিপয় মুসলিম ব্যক্তিত্ব মুসলিম লীগ নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।

ইংরেজি শিক্ষা ইসলাম ধর্মবিরোধী কিংবা হারাম বলে বিশ্বাস করে মুসলমানরা পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীতে রূপান্তর হয়। এমনি পরিস্থিতিতে মুসলীম লীগ নামের যে সংগঠনটি গড়ে ওঠে, মূলত সে সংগঠনই মুসলমানদের অধিকার আদায়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে চিহ্নিত হয়। তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান মুসলিম লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তার ব্যক্তিত্ব ও কর্মকুশলতা ধীরে ধীরে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তিনি হয়ে ওঠেন সংগঠনের মধ্যমণি। এক পর্যায়ে মুসলিম লীগ হয়ে যায় আওয়ামী মুসলীম লীগ। শেখ মুজিব স্বাধীন পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক ভেদনীতিকে গ্রহণ করতে পারেননি। তিনি অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে বৈষম্যহীন শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে শুরু করেন।

তিনি স্পষ্টত উপলব্ধি করেন যে, পাকিস্তানে বাঙালি জাতি শোষিতের জনগোষ্ঠী হিসেবে বেড়ে উঠছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বাঙালি হলেও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। শেখ মুজিব তার তরুণ তুর্কিদের নিয়ে সংগ্রাম গড়ে তোলেন এবং আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু আওয়ামী লীগ গঠন করেন। অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ গ্রহণ করেই আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। বাঙালির মুক্তির নিশানা হয়ে যায় আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবকে ঘিরে। তার যোগ্যতার বলেই তিনি আওয়ামী লীগের শীর্ষপদে অধিষ্ঠিত হন। পাকিস্তানের ঊষালগ্নেই অর্থাৎ ১৯৪৮ সালেই ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়। কেননা স্বাধীন পাকিস্তানে উর্দু ভাষাকেই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হলে বাঙালি ছাত্র সমাজ এর প্রতিবাদ করে। এ থেকেই শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রাম। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের উত্তাল ঢেউ সৃষ্টি হলে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আন্দোলন দমনে রাজপথে অস্ত্র ব্যবহার করে বেশ কিছু তাজা প্রাণ কেড়ে নেয়, ২১ ফেব্রুয়ারি ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়।

এ দিনটি শহীদ দিবসের মর্যাদা লাভ করে। পরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গৌরবে গৌরান্বিত হয়। ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে স্বাধীনতা তীব্রতর হতে থাকে। ১৯৬৯ সালে ৬ দফা ও ১১ দফা ভিত্তিক আন্দোলনে গণঅভুত্থানের মাধ্যমে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব শাহির পতন ঘটে যায়। শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন। দীর্ঘ সংগ্রামণ্ডআন্দোলন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বহুবার কারাগারে যেতে হয়। ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে ক্ষমতার পথ বন্ধ করে দিয়ে পাকিস্তানি আরেক স্বৈরশাসক আইয়ুব শাহির উত্তরসূরি ইয়াহিয়া খান বাঙালির ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালাতে থাকে। শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাংলা’ সর্বজনীন হয়ে ওঠে। বাঙালির হৃদয়ে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানটি গ্রথিত হয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু জাতির উদ্দেশে এক কাব্যময় ভাষণে চূড়ান্ত যুদ্ধের রূপরেখা প্রণয়ণ করেন।

রাজনৈতিক নানা উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১২টায় বঙ্গবন্ধু তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ২৬ মার্চ থেকে। পাকিস্তানি বাহিনী ২৫ মার্চের রাতেই বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুকে তার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলার আকাশে-বাতাসে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান ধ্বনিত হয়। আবালবৃদ্ধাবনিতা সব শ্রেণির মানুষ সাহসী স্লোগান ‘জয় বাংলাকে’ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর ভিত কাঁপিয়ে দেয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ৯ মাসের যুদ্ধকালীন সময়ে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে হাসতে হাসতে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে বাঙালি। দলমত নির্বিশেষে সবারই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ছিল শক্তির উৎস।

তেজদীপ্ত অগ্নিরশ্মির স্লোগান ‘জয় বাংলা’ মহান অমৃত বাণী। যুদ্ধে বিজয়ের পর এই ধ্বনির রেশ সারা বিশ্বের মানব হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য জাতির, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে তোলা হয়। মুক্তিযুদ্ধে চেতনাকে ধ্বংস করে পরাজিত গোষ্ঠী অবৈধভাবে বাংলার মসনদ দখল করে। জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ হয়ে যায় রাষ্ট্রীয়ভাবে। আমাদের সৌভাগ্য এই যে, জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থানের কারণে বেঁচে যান। শেখ হাসিনা-রেহানা বাঙালির ঠিকানা হিসেবে চিহ্নিত হলে রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশেও সর্বজনীন ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে ধরে রাখে শক্তির উৎস ধারায়। আওয়ামী লীগ ব্যতীত সব সংগঠনই ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে উপেক্ষা করতে থাকে। স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি হিসেবে দাবিদার সিপিবি, ন্যাপ, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দলসহ সবাই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ব্যবহার থেকে বিরত থাকে। ফলে এই স্লোগান হয়ে যায় একক আওয়ামী লীগের। কিন্তু এ স্লোগান শুধু আওয়ামী লীগের একক সম্পদ নয়।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি প্রমাণ করে দিয়েছেন। ৭৫-পরবর্তী ২১ বছর পর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন রাজনৈতিক নানা কন্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করে। তার প্রায় পাঁচ বছর শাসনকাল ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাল। তিনি সেটা করে একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের ষড়যন্ত্রের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দিয়ে পাকিস্তানি প্রেতাত্মার ক্ষমতায়ন ঘটে। সে শাসনেরও পতন ঘটে ‘জয় বাংলার’ কাছে। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ টানা ১৩ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায়। এ সময় অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এ সবই হয়েছে জয় বাংলার শক্তির কারণে। এমন সাহসী উদ্যম স্লোগানকে কে দাবিয়ে রাখতে পারে? জনতার এই স্লোগান জনতাকেই দেওয়া হয়েছে ফিরিয়ে। আমাদের সংস্কৃতি ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় আঘাতকারীদের এই বাংলায় কখনও ঠাঁই হবে না। বাঙালি জেগেছে নতুন করে। ‘জয় বাংলা’ আজ সবার মুখে মুখে, পরাজিত হওয়ার আর কোনো ভয় নেই। প্রকৃতিগতভাবেই ‘জয় বাংলা’ আমাদের বাঙালির মনোজগতের অবিস্মরণীয় শক্তির বাণী। এই বাণী যারা এখনও উপেক্ষা করে রাজনীতি করছে, তারা কোনোদিনই সফলকাম হতে পারবে না। কারণ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ছাড়া গোটা জাতির সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ভালোবাসার সম্পর্ক না থাকলে মূল থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে সব সময়। ‘জয় বাংলা’ জয় বঙ্গবন্ধুই আমাদের আগামী দিনের সম্ভবনাকে লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করবে। ‘জয় বাংলা’ শুধু একটি স্লোগান নয়-এটি বাঙালির আত্মা।

Posted on February 18, 2013 by Ehsan Abdullah

1 Vote

WHO IS AFRAID OF JOY BANGLA?

Manzoor Ahmed

BNP’s statement on the unprecedented youth-led rally at the Shabagh Square (Projonmo Chattar), that caught the nation’s imagination, defies logic.

“Questions and serious confusion have arisen about neutrality of the [Shabagh] gathering,” said the BNP statement, “due to chanting of a slogan that was used during the Liberation War, but lost its general acceptability for being made too much partisan in the post-independence years.”

Too much partisan, because BNP and its ally Jamaat chose to abandon the Liberation War slogan, while the Awami League and their allies did not? What compelled the BNP-Jamaat forces to banish the slogan that inspired millions of freedom fighters and became a call for determination of hope for the people during the Liberation War? Are they as afraid of the slogan as were the enemy forces in 1971?

How can one forget that the full-throated sound of Joy Bangla struck terror in the hearts of enemies of the liberation fighters in 1971? My contemporaries will remember that Pakistanis in Dhaka and abroad at that time referred to the liberation forces (Mukti Bahini) as the Joy Bangla Force.

The cruel twist of history, with the ignominy of the killing of the Father of the Nation and the coup d’ etat of 1975, banished Joy Bangla as an assertion of pride and valour. Joy Bangla was replaced by Bangladesh Zindabad as the celebratory slogan for public occasions. Not that Zindabad was wrong, but how could this compare with the evocative power and historic significance of Joy Bangla? And can one be blamed for suspecting that the ban on the slogan was an attempt to turn the clock back and express nostalgia for the days of Pakistan Zindabad?

Even after an elected government was restored in 1991, Zindabad remained the sanctioned slogan, and Joy Bangla remained banned. Do we need to wonder why? The post-1975 military rulers and the political parties that were shaped on the anvil of military rule were not just unenthusiastic, but positively averse, to a slogan that evoked the spirit and ideology of liberation. How else can one explain the allergy to the words that inspired the liberation fighters and bolstered the morale of the people?

General Ershad, who harboured poetic pretensions, indeed had an ear for the evocative resonance of Bangla words in his naming of residential colonies and buildings around Dhaka while he was president. But he carefully avoided pairing the two words Joy Bangla and bestowing any official significance on them during his rule.

This situation prevailed until 2008, except for an interregnum between 1996 and 2000, when the coalition led by Awami League was installed in the government.

I recall that in 1996, after the new government was elected, a national education conference was held in Dhaka where several renowned educationists from the region were invited. The then Prime Minister, Sheikh Hasina, inaugurated the conference. Indian educationist Anil Bordia, a former secretary of education of the government of India, concluded his speech with the words Joy Bangla, in an expression of solidarity and friendship. The Bengali daily Inquilab made it a point to observe the next day that the Indian speaker had uttered the words Joy Bangla in his speech, which was reminiscent to the reporter of Jai Hind, victory to India.

I also recall that in a civil society gathering organised by the Centre for Policy Dialogue prior to the aborted general election in 2006, A.M.A. Muhith, the current finance minister, concluded his comments with the words Joy Bangla. Some of the participants remarked that Mr. Muhith made the discussion unnecessarily controversial by bringing in “Joy Bangla.” Unnecessarily controversial!

Should we not ask why exactly people of certain political persuasion were, and remain averse, to the evocative words Joy Bangla — the words that struck fear in the hearts of the enemy of liberation; words that provided a boost of adrenalin to the freedom fighters; the words that should continue to be an assertion of pride and identity for citizens of Bangladesh. What exactly are they afraid of?

**************************************** 

The author writes on education and development

February 18, 2013

জয় বাংলাকে জাতীয় শ্লোগান ‘মানবে না’ বিএনপি

হাসান শান্তনু

ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২

মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণাদায়ক জয় বাংলাকে সরকারের জাতীয় শ্লোগান করার সিদ্ধান্তে ‘চরম অস্বস্তি, বিব্রতকর পরিস্থিতির’ মুখোমুখি হচ্ছে বিএনপি। দলীয় কোনো সভায় কখনো এ শ্লোগান উচ্চারণ করেনি দলটি। জয় বাংলাকে নিয়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের কটূক্তি করা ও অনুষ্ঠানে তা না বলে তোপের মুখে পড়ার নজির আছে। জাতীয় শ্লোগানের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দলীয় অবস্থান কী হবে, তা নির্ধারণে শিগগির বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের অন্তত ছয়জনের সঙ্গে আলাপ করে মত ও পথ। তাঁরা বলেন, জয় বাংলাকে শ্লোগান হিসেবে ‘মানবে না’ বিএনপি। রাজনীতির মাঠে দলটিকে এ বিষয়ে ‘ঘায়েল, কোণঠাসা’ করতে চাইবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর কৌশল নির্ধারণেও পরিকল্পনা করছে সরকারবিরোধি দল বিএনপি।

প্রজ্ঞাপন জারি করে এ শ্লোগান উচ্চারণ বাধ্যতামূলক করলেও সরকারে না থাকায় দলটির শীর্ষ নেতাদেরকে তা ‘আপাতত’ বলতে হবে না বলে মনে করছেন তাঁরা। দলের প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চালু করা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগান সভা, সমাবেশ শেষে উচ্চারণের ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ আছে দলটির। এর সঙ্গে নতুন শ্লোগান যোগ করার বিষয়ে দলটি ‘ভাবছে না’।

জয় বাংলাকে প্রকাশ্যে বিরোধিতার বদলে চুপচাপ থাকার কৌশল নেবে বিএনপি। গত রোববার মন্ত্রিসভার বৈঠকে একে জাতীয় শ্লোগান করার সরকারের সিদ্ধান্তের পর থেকে এখনো পর্যন্ত দলের কেউ সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরের দিন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সরাসরি না হলেও ‘আক্রমণাত্মক বক্তব্য’ দেন। তিনি দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগের সরকার জয় বাংলা ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।’

জয় বাংলাকে জাতীয় শ্লোগান করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে। আগামী ৭ মার্চের আগে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেষ করেন জয় বাংলা বলে। ইতিহাসের বিষয়টি বিবেচনায় ৭ মার্চে প্রজ্ঞাপন জারির ভাবনা আছে সরকারের।

যোগাযোগ করলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গ মত ও পথকে বলেন, ‘জয় বাংলাকে জাতীয় শ্লোগান করার বিষয়ে বিএনপির আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য নেই।’ এ বিষয়ে দলের বক্তব্য, বা অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলীয় ফোরামে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়ে গণমাধ্যমকে পরে জানানো হবে।’

প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও জয় বাংলাকে নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের ‘কটূক্তিপূর্ণ বক্তব্যের’ ভিডিও ভাইরাল হয় গত নভেম্বর মাসে। ইন্টারনেট থেকে ওই ভিডিও অপসারণের ব্যবস্থা নিতে গত ৮ ডিসেম্বর নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। সমালোচিত ওই ভিডিওর বক্তব্যের বিষয়ে আলাল, বা বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো ব্যাখ্যা গণমাধ্যমে দেওয়া হয়নি।

রাষ্ট্রীয় দিবস পালন, উদযাপনের অনুষ্ঠানেও বিএনপির নেতাদের জয় বাংলা বলার নজির নেই। এ শ্লোগান উচ্চারণ না করে তোপের মুখে পড়ার ঘটনা আছে। ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলায় মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে পড়েন বিএনপির নেতা ও সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী সিরাজুল হক। বিক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর ওপর চড়াও হতে গেলে পরিস্থিতি শামাল দেন জেলা প্রশাসক।

মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জয় বাংলা সম্পর্কিত হলেও এর সঙ্গে দলীয় রাজনীতির সংকীর্ণতা যোগ হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে রাষ্ট্রপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এক পর্যায়ে ক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান। রাজনৈতিক দল গঠন করেন তিনি। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান থেকে বাদ পড়ে যায় জয় বাংলা। যোগ হয় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’। মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান দলীয় রাজনীতির বিভাজনের কবলে পড়ে। তবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ দলীয় ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশে জয় বাংলা ব্যবহার করে।

https://www.bbc.com/bengali/news-55272264আ https://www.bbc.com/bengali/news-55272264গস্ট ২৫, ২০২৪, রবি https://www.bbc.com/bengali/news-55272264বার, ১১:৪০ অপরাহ্ন

আগস্ট ২৫, ২০২৪, রবিবার, ১১:৪০ অপরাহ্ন

জয় বাংলাশ্লোগান আর ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে যেভাবে বিভক্তি এসেছে

১৯৭১ সালে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে পাকিস্তান বাহিনীকে মোকাবেলা করতো।

  • Author,কাদির কল্লোল
  • Role,বিবিসি বাংলা, ঢাকা
  • ১২ ডিসেম্বর ২০২০

১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু মূল নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এর মূলে ছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতা

‘জয় বাংলা’ শ্লোগান জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত করেছিল সেই যুদ্ধে।

কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সেই ঐক্যে ফাটল ধরে। গত ৫০ বছরে এসব বিষয় নিয়ে বিভক্তি এবং মতপার্থক্য বেড়েই চলেছে।

‘জয় বাংলা’ মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান। এই শ্লোগান কীভাবে বাংলাদেশের হয়েছিল এ নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে।

উনিশশ ষাটের দশকের একজন ছাত্র নেতা জানিয়েছেন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যূত্থানের চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার আগেই রাজপথে ছাত্রদের মিছিলে উচ্চারিত হতে থাকে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান।

১৯৭০ সালের যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই নির্বাচনের আগে স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ শেষ করেছিলেন ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে।

৬৯-এর গণঅভ্যূত্থানের নেতা এবং এখন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়েই মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীকে মোকাবেলা করতো।

“১৯৬৯-এ গণঅভ্যূত্থানের সময়ই জয়বাংলা শ্লোগান দিতে শুরু করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ৬৯ সালেই পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার সময় আমরা এই শ্লোগান দিয়েছি।”

“মুক্তিযুদ্ধের সময় জয়বাংলা জাতীয় শ্লোগানে রুপান্তরিত হয়। জয়বাংলা শ্লোগান দিয়েই কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীকে মোকাবেলা করে এবং পরাজিত করে” – বলেন তোফায়েল আহমেদ।

জয় বাংলা‘ এবং ‘জিন্দাবাদ

স্বাধীন বাংলাদেশে অল্প সময়ের মধ্যেই ঐক্যে ভাঙন ধরে।

রাজনৈতিক বিভক্তির বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায় দু’টি শ্লোগান ‘জয় বাংলা’ এবং ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’

তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বিভক্তির রাজনীতি থেকে মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগানকেও দলীয় শ্লোগান হিসাবে দেখিয়ে বিতর্কিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পরও কিন্তু আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জয়বাংলা শ্লোগান দিতাম। কিন্তু পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল হওয়ার পরে যেমন জিয়াউর রহমানের বিএনপি এবং যে জাসদ একসময় জয়বাংলা শ্লোগান দিতো, তারা সেই শ্লোগান দেয়া বন্ধ করে। জাসদতো আওয়ামী লীগ থেকেই বেরিয়ে গিয়ে নতুন দল করেছিল ১৯৭২ সালে।”

“এরপরে বিভিন্ন দল এটাকে দলীয় শ্লোগান হিসাবে চিহ্নিত করে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।”

মি: আহমেদ বিভক্তির রাজনীতি শুরুর দায় চাপিয়েছেন জাসদের রাজনীতি এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ওপর।

কিন্তু জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আকতার বলেছেন, সদ্য স্বাধীন দেশে মতাদর্শের পার্থক্য নিয়ে ছিল তাদের রাজনীতি। মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি নিয়ে তারা কখনও কোন প্রশ্ন তোলেননি বলে তিনি দাবি করেছেন।

“মুক্তিযুদ্ধের পরে যে সময়টি, তখন জাসদ যে কাজটি করেছিল, সেটা একেবারেই বাংলাদেশের অর্থনীতি-রাজনীতি কেমন হবে- তা নিয়ে আমাদের সাথে একটা পার্থক্য তৈরি হয়েছিল। আমরা সমাজতন্ত্রের আদর্শ লালন করেছিলাম।”

“আমরা জাসদ আজকে বলছি এবং তখনও বলেছি, সমাজতন্ত্রের আন্দোলন এগিয়ে নিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার লড়াইকে ঐক্যবদ্ধভাবে চালিয়ে যেতে হবে।” বলেন জাসদ নেত্রী।

বিভক্তির পথে

আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেন, জাসদই প্রথম ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দেয়া বন্ধ করেছিল।

জাসদ নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, সদ্য স্বাধীন দেশে শেখ মুজিবের সরকারের বিরোধীতা করে নতুন দল জাসদের উত্থান হলে সেই দলটি ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান ব্যবহার করেনি। কিন্তু তখন জাসদ ‘জিন্দাবাদ’ শ্লোগান দেয়নি।

তারা বলেছেন, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবকে হত্যার পরই “হত্যাকারীরা প্রথম বাংলাদেশ জিন্দাবাদ শ্লোগান দিয়েছে।”

সেই সময় আওয়ামী লীগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় ‘জিন্দাবাদ’ শ্লোগানের প্রাধান্য ছিল দীর্ঘ সময়।

জাসদ নেত্রী শিরীন আকতার বলেছেন, ‘৭৫-এর পট পরিবর্তনের পরই জয় বাংলা শ্লোগানের পাশাপাশি বাঙালি জাতীয়তাবাদসহ মুল ভিত্তিগুলোর ওপর প্রভাব পড়ে বিভক্তির রাজনীতির।

“জয়বাংলা শ্লোগান আমরা যারা দিয়েছি, স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন রকম মতাদর্শগত সংগ্রাম তখন ছিল। তবে সবচেয়ে বড় যে সংকটটি তৈরি হয়েছিল, সেটি হলো, যারা পাকিস্তানে বিশ্বাস করেছে, যারা বাংলাদেশে বিশ্বাস করেনি এবং যারা ধর্মান্ধ- সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিল, ৭৫এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই ব্যক্তিবর্গ সেনাশাসনের সমর্থনে একটা রাজনীতির জন্ম দিলো। যার উদ্যোক্তা জিয়াউর রহমান।”

তিনি আরও বলেছেন, “যখন এই জাতির ভিত্তি আমরা বাঙালি না বাংলাদেশি-এই পার্থক্যের মধ্যে চলে আসলো, তখনই কিন্তু এই দ্বিধা বিভক্তি দেখা গেলো।”

তবে শিরীন আকতার বলেন, ধর্ম নিরপেক্ষতার পক্ষের শক্তি এখনও ঐক্যবদ্ধ আছে।

“যে শক্তিটা পাকিস্তানের ধারায় মুক্তিযুদ্ধের সময়ও কাজ করেছে – সেই শক্তি রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা যখন পেলো, তখন সেটা শক্তিশালী হয়েছে।”

বাঙালি নাকি বাংলাদেশি

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ভিত্তি ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়।

সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে চার মূল নীতির একটি নীতি হিসাবে যুক্ত করা হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রওনক জাহান বলেছেন, ১৯৭০ এর নির্বাচন এবং পরে মুক্তিযুদ্ধেও জনগোষ্ঠীর একটা অংশ বিরোধিতা করেছিল। ৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রের সেই শক্তিকে সাথে নিয়ে তখন সামরিক শাসকরা বিভক্তির রাজনীতির বিস্তার ঘটিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

“বাঙালি জাতীয়তাবাদ সংবিধানেই যখনই আনা হচ্ছিল, তখনই পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধিরা বললেন যে, তারা বাঙালি নন। তারপর যারা ইসলামপন্থী, তারা যখন আবার বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করলেন, তারা পাকিস্তানি ধারণা ফেরত আনতে চেষ্টা করলেন।”

“বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরই সামরিক শাসকরা রাজনৈতিক সমর্থন যোগাড় করার জন্য এই ইসলামপন্থীদের সাথে নিয়ে কিছু বামপন্থীকে কাছে টানতে শুরু করলেন। তখন ডান-বাম মিলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি তারা নিয়ে এলেন। ফলে বিভক্তি দৃশ্যমান হতে থাকলো।”

জিয়াউর রহমান বাঙালি জাতীয়তাবাদের বদলে এনেছিলেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। তার সময়ই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ফিরে আসে।

রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ অনেক সময়ই এই বিষয়গুলোকে নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে থাকে।

তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের নেতা সংবিধানে বিসমিল্লাহ যুক্ত করলেও ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র করার কোন চিন্তা ছিল না।

“জিয়াউর রহমান সাহেব করেছিলেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। সেটা ছিল যৌক্তিক এবং সঠিক। কারণ বাংলাদেশেতো শুধু বাঙালি ছিল না, উপজাতি সহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ছিল। তবে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে কোন সমস্যা ছিল না। বাংলাদেশে একটা বাস্তবতা আছে, যে ধর্মেরই হোক না কেন-তারা স্ব স্ব ধর্ম বিশ্বাসকে গুরুত্ব দেয়। সেই জায়গায় তিনি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্ম বিশ্বাসকে মর্যাদা দেয়ার জন্য বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংবিধানে যুক্ত করেছিলেন। “

“কিন্তু ধর্মকে ভিত্তি করে রাষ্ট্র গঠন করবার কোন প্রচেষ্টা সেসময় নেয়া হয়নি এবং এখনও তা নেই” – বলেন মি: আলমগীর ।

রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম

আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, জিয়াউর রহমান সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি পাল্টিয়ে বিসমিল্লাহ যুক্ত করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতাতেই আরেক সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ সংবিধানের আবার সংশোধন করে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করেছিলেন।

তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল ভিত্তিগুলো নিয়ে বিভক্তির রাজনীতির কারণে উগ্র শক্তিগুলো এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

“জাতির জনককে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা যখন নিলো, তারপর সে কিন্তু সংবিধান পরিবর্তন করলো। আজকে যে মৌলবাদীরা মাথাচাড়া দিচ্ছে, এর ভিত্তি করে দেয়া হয়েছিল সেই সংশোধনীর মাধ্যমে।”

উল্টোপথে

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি যখন বদলে গেছে, তখন দেশ একেবারে উল্টোপথে হেটেছে।

যদিও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় সরকারে এসে ৭২ এর সংবিধানের অনেক বিষয় ফেরত এনেছে।

কিন্তু বিসমিল্লাহ এবং রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম – এই দু’টি বিষয়ে তারা হাত দিতে পারেনি।

অধ্যাপক রওনক জাহান বলেছেন, বিভক্তির রাজনীতির কারণে যে পরিস্থিতি হয়েছে, সেটা দু:খজনক বলে তিনি মনে করেন।

“মুক্তিযুদ্ধের সময়ও কিছু কিছু লোক যে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল, যেমন মুসলিম লীগ এবং ইসলামপন্থী বিভিন্ন দল, তারা সুযোগের সন্ধানে ছিল। আর সুযোগ পেয়েই তাদের বিস্তার ঘটছে।”

অন্যদিকে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের শাসনের ব্যর্থতা এবং বাকশাল বা একদলীয় শাসনের কারণেই বিভক্তির রাজনীতি শুরু হয়েছিল।

বিএনপি নেতা মি: আলমগীর বলেছেন, স্বাধীনতার পর প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির মধ্যে অনেক ফারাক ছিল এবং সেকারণেই হতাশা থেকে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে যেতে শুরু করে।

“মূলত স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগের যে শাসন, তাতে জনগণের আশা আকাঙ্খা কিছুটা পূরণ হয়নি এবং চরম হতাশা দেখা দেয়। সেখান থেকেই মূলত সেই ঐক্য কিছুটা বিনষ্ট হয়েছে। এটা মূলত আওয়ামী লীগের অপশাসনের কারণে। এছাড়া তাদের যে ঐ একক চিন্তাভাবনা ছিল যে মুক্তিযুদ্ধের একক কৃতিত্বই আমাদের। এই যে ধারণাটা সৃষ্টি করা হলো, একারণেই বিভক্তি প্রসারিত হয়েছে।”

আওয়ামী লীগ এমন অভিযোগ মানতে রাজি নয়।

বিভক্তি: দৃশ্যপটে ভারত

বিভক্তির রাজনীতি নিয়ে এখনকার প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ রয়েছে।

তবে লেখক এবং গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বিভক্তির রাজনীতির প্রেক্ষাপটকে দেখেন ভিন্নভাবে।

“ধর্ম নিরপেক্ষতার চর্চা হয়েছিল ৬০ এর দশকে। একটা সাংস্কৃতিক জাগরণও ছিল। যেহেতু পাকিস্তানি শাসকরা এদেশে বৈষম্য তৈরির জন্য এবং শোষণ করার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করেছে। সেকারণে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক আন্দোলনটাই অসম্প্রদায়িক রাজনীতিতে পরিণত হয়।”

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর যখন পাকিস্তান পরাজিত হয় এবং তারা আর দৃশ্যপটে নাই। তখন কিন্তু ধর্ম নিরপেক্ষতার আবরণটি সরে গেছে। সেখানে সামনে এসেছে নতুন বাস্তবতা আমাদের আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রতিবেশী ভারত। “

“এই ভারতকে সাম্প্রদায়িক শক্তি সব সময়ই মনে করতো হিন্দু রাষ্ট্র। সেই জিনিসটাই আস্তে আস্তে মাথা চাড়া দিয়েছে। এবং এই ধর্মনিরপেক্ষতার পথ থেকে আস্তে আস্তে ক্ষমতাসীনরাও সরে গেছে। তখনই কিন্তু পরবর্তী ইতিহাসের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়ে গেছে” -বলেন মি. আহমেদ।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই দলের নেতারাই স্বীকার করেন যে, বিভক্তির রাজনীতির সুযোগে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এবং উগ্রতার বিস্তার ঘটছে।

কিন্তু বাংলাদেশের এখনকার বাস্তবতায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিতে আবারও ঐকমত্য হওয়া সম্ভব নয় বলে তারা মনে করেন।

To top